উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড যেতে করণীয়
উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড হতে পারে সেরা একটি দেশ। পরপর টানা তিনবার বিশ্বের সবচেয়ে সুখি দেশের তালিকায় ছিল ফিনল্যান্ড। কিন্তু সম্প্রতি ন্যাটো ইস্যুতে একটু নড়বড়ে দেখা গেলেও যথেষ্ট শক্তিশালি এ দেশ নিজেদেরকে তালিকার শীর্ষে ধরে রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
পড়াশোনা করতে ফিনল্যান্ড এখন অনেক সুজোগ সুবিধা দিচ্ছে যা কিছুদিন আগেও ছিল না। এখন পড়াশোনার পর পর ই ফিনল্যান্ড এর ভিসার জন্য আবেদন করা যাইয় আর পড়াশোনার সময় টা এখন A-ক্যাটাগড়িতে ধরা হচ্ছে। সম্প্রতি এই আপডেট এসেছে।
যাই হোক উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড যেতে যেভাবে আপনি প্রস্ততি নিতে পারেন তার ই একটু ধারণা দেবার চেষ্টা করবো এই পোস্ট এ। মাঝে মাঝে আপডেট এর মাধ্যমেও আপনাদের কে জানিয়ে দিবো সুজোগ সুবিধা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়গুলো।
উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড যেতে করনীয়
ফিনল্যান্ড এ আপনি ব্যাচেলর অথবা মাস্টার্স এর জন্য খুব সহজেই আবেদন করতে পারবেন। দুই পদ্ধতিতে আবেদন করা যায়।
আরোও পড়ুনঃ আয়েলস এর জন্য যেভাবে প্রিপারেশন নিবেন
জয়েন্ট এপ্লিকেশন
সাধারণত ব্যাচেলর পড়তে যাওয়া সকলের ই চাহিদার শীর্ষে থাকে এই পদ্ধতি। জয়েন্ট এপ্লিকেশন শুধুমাত্র এপ্লাইড সাইন্স ইউনিভার্সিটি গুলোতে করা যায়। যেখানে একটি আবেদনের মাধ্যমে সর্বোমোট ৬টি বিষয় বা ৬টি ইউনিভার্সিটি তে আবেদন করা যায়।
জয়েন্ট আবেদনগুলো ফিনিশ ন্যাশনাল এজেন্সি ফর এডুকেশন দ্বারা সমন্বিত হয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই জয়েন্ট আবেদনের সময়সূচী নির্ধারণ করে এবং সাধারণ পদ্ধতিগুলি একটি ডিক্রি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ইউনিভার্সিটি গুলো তাদের প্রোগ্রাম বা সাবজেক্ট গুলো অফার করে এবং তাদের ভর্তির মানদণ্ড অনুসারে সাবজেক্ট বা প্রোগ্রামগুলিতে শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করে থাকে।
আগামী সেপ্টেম্বর এর জন্য জয়েন্ট এপ্লিকেশন এর আবেদন শুরু হবে ০৪ জানুয়ারী ২০২৩ থেকে এবং চলবে ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত। তাই তৈরী থাকুন আর নিজেকে প্রস্তত করুন।
উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড আবেদন করার পদ্ধতি
প্রতি বছরের শেষের কয়েক মাস থেকে নতুন বছর শুরুর দিকে তথা জানুয়ারির ভেতর এই আবেদনের সময় শেষ হয়। শুরুতে আপনি আপনার তথ্য গুলো দিয়ে আবেদন করবেন। স্টাডি ইনফোর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর বিস্তারিত আপনার ইমেইলে চলে আসবে। ইমেইলের মাধ্যমে পরীক্ষার তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
স্টাডি ইনফোর ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন। কোনকিছু বুঝতে অসুবিধে হলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন অথবা আমাদের পেজে বা গ্রুপে ও জানাতে পারেন।
এখানে এন্ট্রান্স এক্সাম এর মাধ্যমে আপনাকে বাছাই করে অফার লেটার দেয়া হয়। সাধারণত ফেব্রুয়ারী- মার্চ মাসেই এন্ট্রান্স এক্সাম হয়ে থাকে।
এন্ট্রান্স এক্সাম দুই ধাপে হয়ে থাকে। প্রথমে MCQ বা রিটেন যেটাকে বলে অনেকে। রিটেন এক্সাম এ উত্তীর্ন হবার পর আবার ইমেইলে জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইমেইলে জানানো হয়। দ্বিতীয় ধাপ হলো গ্রুপ ডিসকাশন।
গ্রুপ ডিসকাশন পর্বে একটি টপিক দেয়া থাকে এবং সেই টপিকের উপরে লিখতে বলা হয়। এবং লিখা জমা দিয়ে গ্রুপের অন্য সদস্যদের সাথে ডিসকাশন করতে বলা হয়।
গ্রুপ ডিসকাশন এ পাশ করার পর ইমেইলে আপনাকে অফার লেটার দেয়া হয়। ভার্সিটির নাম্বার ক্রম অনুসারে ভার্সিটি গুলো অফার লেটার বা ওয়েটিং লিস্ট এ রাখে।
সেপারেট এপ্লিকেশন
উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড এ সেপারেট এপ্লিকেশন হলো প্রতিটি ইউনিভার্সিটি তে আলাদা আলাদা এপ্লিকেশন করার নিয়ম। এখানে আপনার যেতাতে ইচ্ছা সেটাতে আবেদন করতে পারেন। ভার্সিটির রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী তাদের ওয়েবসাইটে দেখে আবেদন করতে পারেন।
আরোও পড়ুনঃ বিদেশে স্কলারশীপ এর জন্যে প্রিপারেশন
সেপারেট এপ্লিকেশন এর ক্ষেত্রে অনেক ভার্সিটি এক্সাম নেয়, আবার অনেক ভার্সিটি এক্সাম না নিয়ে আপনার স্কোর ব্যাকগ্রাউন্ড এর উপর অফার লেটার দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্যাট স্কোর, আয়েলস স্কোর চাকুরির অভিজ্ঞতা ইত্যাদি অনেক কাজে লাগে।
উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড হতে পারে চমৎকার একটি স্থান যেখানে আপনি খুব সহজেই যেতে পারবেন। ভার্সিটি অনুসারে টিউশন ফি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ব্যাচেলরের জন্য সাধারণত ৪০০০ ইউরো থেকে ১০০০০ ইউরোর আশে পাশে হয়ে থাকে। মাস্টার্স এর ক্ষেত্রেও ৫০০-১০০০ এর মত বা কাছাকাছি হয়ে থাকে।
আপনি যে ভার্সিটি তে আবেদন করতে চান সেই ভার্সিটির ওয়েবসাইটে সকল তথ্য দেয়া আছে। খুব সহজেই দেখে নিতে পারবেন।
উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড এবং স্কলার্শিপ
উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড এ যারা যেতে আগ্রহী তারা অবশ্যই স্কলার্শিপ নিয়ে পড়তে যেতে চান। মাস্টার্স এ অনেক ইউনিভার্সিটি ১০০% স্কলারশিপ দিয়ে থাকে যেটা ব্যাচেলর এর ক্ষেত্রে একটু কম। এক্ষেত্রে স্যাট স্কোর ভালো থাকলে সহজেই পাওয়া যায়।
এছাড়া এন্ট্রান্স এক্সামের পর ও বিভিন্ন ভাবে ১০-৫০% স্কলার্শিপ বা বেশি ও দিয়ে থাকে। স্কলার্শিপ এর তথ্য ও অফার লেটার এর সাথে দিয়ে দেয়। কিছু কন্ডিশন দিয়েও স্কলার্শিপ দিয়ে থাকে ভার্সিটি গুলো। এবং ওখানে পড়াশোনার সময় ও স্কলার্শিপ এর জন্য আবেদন ও স্কোর ভালোর উপর স্কলার্শিপ দিয়ে থাকে।
পরীক্ষা পদ্ধতি
এন্ট্রান্স এক্সামের মাধ্যমে ফিনল্যান্ড এর ইউনিভার্সিটি গুলো ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে থাকে। করোনার আগে এই পরীক্ষা ইন্ডিয়া গিয়ে দিতে হতো বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের। তবে করোনার পর এটি অনলাইনে হচ্ছে। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দুই ধাপে হয়ে থাকে।
প্রথম ধাপ হলো লিখিত পরীক্ষা যেটি MCQ আকারে হয়ে থাকে। আবেদন করার পর ইমেইলের মাধ্যমে পরীক্ষার তারিখে এবং সময় জানিয়ে দেয়া হয়। সেই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম ধাপে ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। শুধু সময় মত লিংক এ ঢুকে পরীক্ষা দিতে হবে। এখানে সময় দেয়া হয় ১ ঘন্টা।
প্রথম ধাপে পাশ করার পর দ্বিতীয় ধাপের জন্য বাছাই করা হয় যেখানে গ্রুপ ডিসকাশন হয়। গ্রুপ ডিসকাশন এর ও দুইটি পার্ট থাকে। গ্রুপ ডিসকাশনে প্রথমে আইডি ভেরিফাই করা হয়। টিচার রা আপনার আইডি দেখতে চাইবে। এরপর সবাইকে একটা রেন্ডম টপিক দেয়া হবে এবং বলা হবে সেটি নিয়ে লিখতে।
লিখা শেষ হলে সেই একই টপিকের উপর গ্রুপের সবাইকে আলোচনা করতে বলা হবে। আপনি আপনার নিজের মত করে বাকি সবার সাথে আলোচনা করবেন। এখানে শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রীরাই আলোচনা করেন। টিচার রা শুধু সেগুলো দেখে যাচাই করে।
আশাকরি তথ্যগুলো উচ্চ শিক্ষায় ফিনল্যান্ড যাওয়া নিয়ে আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আরোও জানার জন্য অবশ্যই প্রশ্ন করুন। আমাদের ফেসবুকে পেজের মেসেঞ্জারে অথবা গ্রুপে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার। কোন রকম ভুল তথ্য থাকলে জানিয়ে দিবেন যাতে করে অন্যরাও সঠিক তথ্য জানতে পারে। ধন্যবাদ!