শিক্ষাঙ্গন

দেশের ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বিপক্ষে

ইতিমধ্যে মধ্য হয়ে গেছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সকল স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ছুটি বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এই পদক্ষেপকে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমস্যার কথা জানান। চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার পর থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই তাঁদের বাসায় অবস্থান করছেন।

নিজ এলাকাতে ওয়াইফাই তো দূরে থাক, অনেক ক্ষেত্রে ভালোভাবে নেটওয়ার্কও পায় না। এ ধরনের দুর্বল ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করা কীভাবে সম্ভব?

সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রাথমিকভাবে যখন ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়, তখন এই স্বল্প সময়ের (দুই সপ্তাহ) ছুটির জন্য অনেকেই তাঁদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী বাসায় নিয়ে যাননি। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী ছাড়া অনলাইনে ক্লাস করা বেশ কষ্টসাধ্য একটি বিষয়।

এ ছাড়াও দেশের চলমান আতঙ্কজনিত পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার মনমানসিকতা নেই বলেও অভিমত অনেক শিক্ষার্থীর।

অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসানুল বাকের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচকভাবে নেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীরা যদি ঘরে বসে এই অলস সময়টা তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা হলেও কাজে লাগাতে পারে, সেটা অবশ্যই ভালো বিষয়। তবে সব শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করলে এটা সম্ভব নয়। যাদের গ্রামাঞ্চলে বাসা, তারা এটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না।’

গতকাল শুক্রবার অনলাইনে ক্লাসের পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। জরিপে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বিপক্ষে মত দেন।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মেরাজ তালুকদার বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী এবং কিছু শিক্ষকও আছেন যাঁরা অনলাইনে ক্লাসের সিস্টেম সম্পর্কে তেমন অবগত নন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্বল ইন্টারনেট সেবা, মোবাইল ডেটার অর্থ ব্যয় এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত। তবে প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইনে ক্লাসের উদ্যোগ অবশ্যই যুগোপযোগী।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মো. নজরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থী ভালোভাবে অবগত নন। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করায় নিয়মিত ইন্টারনেট কেনার সামর্থ্য অনেকের নেই। এই বিপর্যয়ে অনলাইনে ক্লাস করা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য কখনোই যৌক্তিক হবে না।

এতসবের মধ্যেও বিভিন্ন ইতিবাচক বিষয় দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঘরে বসে অলস সময় পার করার চেয়ে অনলাইনে ক্লাস করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কিছুটা উপকৃত হলেও আমাদের সার্থকতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেশকে ডিজিটালাইজেশন করার অংশ হিসেবেই এ উদ্যোগ। ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইনে ক্লাস চলমান রয়েছে। বিষয়টা সবার ভালোভাবে নেওয়া উচিত। তবে এটা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংগঠন, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল বলেন, বর্তমানে অনলাইনে যুক্ত নয়, এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই নগণ্য।

শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং সেশনজটের কথা চিন্তা করেই পরীক্ষামূলকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব বিভাগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। তবে যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো থেকে যৌক্তিক সমস্যার বিষয়ে জানানো হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এ বিষয়ে ভাববে।

 

সূত্রঃ প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please Unblock Your Adblocker!